(মোঃ সফিউদ্দিন, লেকচারার, উত্তরা ইউনিভার্সিটি)
শেষ হল দীর্ঘ ১ মাসের মিলনমেলা । সেই সাথে বাঙ্গালির রাত জেগে খেলা দেখা। এমনিতেই বিশ্বকাপ ফুটবল বলতেই বাঙ্গালি আত্মহারা । বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই সর্বত্র সাজ সাজ রব । কার আগে কে প্রিয় দলের পতাকা উড়াবে, প্রিয় খেলোয়াড়ের জার্সি কিনবে, এর প্রস্তুতি সর্বত্র । চায়ের আড্ডায়, বন্ধুদের মহলে মেসি- না নেইমার- না রোনালদো কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ- এ নিয়ে তর্কের শেষ নেই। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজনে ব্রাজিল সমর্থকদের বাঁধা আর প্রস্তুতি নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মাপকাঠিতে সফল এক বিশ্বকাপ বলাই চলে। নানা ঘটন-অঘটনের এ বিশ্বকাপে শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনা। গ্রুপ পর্ব থেকে গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিদায়ে যার শুরু, চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি ও রোনালদোর ‘পর্তুগাল’ এর বিদায়ে তার ষোলকলা পূর্ণ!! শুরু থেকেই বড় দলগুলোর বিদায়ে বিশ্বকাপ কিছুটা জৌলুস হারালেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর নৈপুণ্য সবার নজর কাড়ে। এরই মধ্যে গ্রুপ অব ডেথ খ্যাত “ডি” গ্রুপ থেকে সাবেক দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্দের টিকিট পায় কোস্টারিকা । গোলের খেলা ফুটবল যে কেবল গোল করারই খেলা নয়, গোল রক্ষারও খেলা তা হারে হারে বুঝিয়ে দিয়েছেন গোলরক্ষকরা । জার্মানির নুয়ান, কোস্টারিকার নাভাস, মেক্সিকোর ওচোয়া, আর্জেন্টিনার রমেরুরা তো রীতিমত ‘চীনের মহা প্রাচীরই’ গড়ে তুললেন গোল পোস্টের সামনে; প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিলেন । নানা ইতিহাসের সাক্ষী এ বিশ্বকাপে কি ছিল না??- আধুনিক প্রযুক্তির ভেনিশিং স্প্রে, গোললাইনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অত্যধিক গরমে কুলিং টাইম সব কিছুই ছিল এ বিশ্বকাপে । এরই মধ্যে কোটি সমর্থকের হৃদয়-মন জয় করে পরপর চার ম্যাচে “ম্যান অব দ্যা ম্যাচ” হয়ে দীর্ঘ ২৪ বছরের অপেক্ষার ইতি ঘটালেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি । জাদুর বাক্স থেকে একের পর এক ঝাঁপি খুলে আর্জেন্টিনাকে পার করলেন সেমিফাইনালের বৈতরণী । কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না ! পরপর চার বার ফিফার বর্ষ সেরা নির্বাচিত হওয়া ভিন গ্রহের ফুটবলার মেসি ফুটবলের জাগতিক সব প্রাপ্তি নিজের করে নিলেও অধরা ওই “বিশ্বকাপটা” ছুঁয়ে দেখা হল না । ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগা ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা স্বপ্নের কাপটি থেকে তখন ৭ মিনিট দূরে। আচমকা কোটি সমর্থকের হৃদয় ভেঙ্গে দিয়ে অতিরিক্ত ২৩ মিনিটে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের একমাত্র গোলটি করলেন জার্মানির মারিয়ে গোটসে । বাধ ভাঙ্গা উল্লাসে তখন মাঠের হিরো জার্মানরা চতুর্থ বারের মত বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিল । কি দেখেনি এ বিশ্বকাপ !! সদ্য কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখা জেমস রদরিগেস- কলাম্বিয়ার এ বিস্ময় বালক একাই ৬ গোল করে দলকে প্রথম বারের মত টেনে তুললেন কোয়ার্টার ফাইনালে- পেলেন গোল্ডেন বুটের খেতাব; জার্মানির মিরস্লাব ক্লোসা- বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম বারের মত ১৬ গোল করে পেলেন সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব । অঘটনের কি এখানেই শেষ !! নিজেদের মাটিতে টানা ৩৯ বছর অপরাজিত থাকার বিরল রেকর্ডের দাবীদার ব্রাজিল যখন নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ ফুটবল জেতার স্বপ্নে বিভোর- তখন কেও কি জানত আর এক ঘণ্টা পরে নিজেদের মাটিতেই লাখো দর্শকের সামনে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জা জনক অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে ?? স্বপ্নের ঘোর কাটতে না কাটতেই ৬ মিনিটেই ব্রাজিলের জালে জার্মানির ৪ গোল !! শেষ পর্যন্ত ৭-১ গোলের পরাজয়ের ওই রাতটি ভুলে যেতে চাইবে কোটি কোটি ব্রাজিল সমর্থক।। তারপর ও তো মানুষ স্বপ্ন দেখে, আশায় বুক বাঁধে । রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বিশ্বকাপ ফুটবলঃ ২০১৮ কার জন্য স্বপ্নের দুয়ার খুলে তা সময়ই বলে দেবে।।
|